শিক্ষাঙ্গন

কুকুরের আক্রমণে নিরাপত্তা শঙ্কায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

প্রিন্ট
কুকুরের আক্রমণে নিরাপত্তা শঙ্কায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ছবি : ঢাকা ইনসাইটস


প্রকাশিত : ১৩ মে ২০২৫, রাত ১২:৩৭

বন্ধুদের সাথে চায়ের আড্ডা, ছোট্ট দোকানের পরিচিত কোলাহল, আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ রিফাতের সে দিনের সেই স্বাভাবিক মূহূর্ত হঠাৎ করেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। তপন দাদার দোকানে চা খেতে বসেছিলেন রিফাত ও তার কয়েকজন বন্ধু। আড্ডার মাঝেই দোকানের একটু দূরে ৪-৫টি কুকুর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছিল। কারও বিশেষ নজর ছিল না, কারণ এমন দৃশ্য খুব একটা অচেনা নয়। কিন্তু হঠাৎ একটি কুকুর ছুটে এসে রিফাতের পায়ে আচমকা কামড়ে দেয়।

এভাবেই কুকুরের আক্রমণের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া সময় কুকুরের আক্রমণের শিকার হন তিনি। রিফাত ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি কুকুর আমার পায়ে আচমকা কামড়ে দেয়। ক্ষতস্থান থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছিল। পরে আমার বন্ধুরা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল নিয়ে যায়। ডাক্তার আমাকে রেবিস ভ্যাকসিন নিতে বলে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে সূত্র মতে গত দুই মাসে (মার্চ,এপ্রিল) ৩ জন শিক্ষাথী ক্যাম্পাসের মধ্যে কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়েছে। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। একই সাথে বাড়ছে জলাতঙ্ক ও রেবিস ভাইরাস সংক্রামণের ঝুঁকি।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুকুরের উপদ্রব সব থেকে বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, ওয়াক ওয়ে ও কটকা সংলগ্ন এলাকায়। কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, " আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে কুকুরের উপদ্রব তুলনামূলক বেশি। শিক্ষার্থীরা এখানে কুকুরকে খেতে দেয়। যার ফলে কুকুররা আকৃষ্ট হচ্ছে ক্যাফেটেরিয়া ও আশেপাশের এলাকার প্রতি। কুকুরদের এই শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্ভরতা আরো বেশি আক্রমণাত্মক করে তুলেছে। "

রাতের অন্ধকারে অপরিচিত কোন শিক্ষার্থীকে দেখলেই কুকুরগুলো তেড়ে যাচ্ছে তাদের দিকে। এই কারণে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ভুগছে । এ বিষয়ে জানতে চাইলে অপরাজিতা হলের বাসিন্দা পুষ্পিতা পূজা বলেন "কখনো কখনো টিউশন করিয়ে হলে ফিরতে রাত হয়ে যায়। তখন হাদিস চত্বর থেকে হল পর্যন্ত হেটে আসতে ভয় লাগে। মাঝে মাঝে কুকুরগুলো চিনতে না পেরে তেড়ে আশে আমাদের দিকে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার। "

বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কুকুর কে ভ্যাকসিন না দেওয়ার কারণে বেড়েছে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি। কুকুরের আক্রমণের পর করনীয় সম্পর্কে জানতে চায়লে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি মেডিকেল অফিসার ডঃ আরিশমার দেবনাথ বলেন " সকল কুকুরের শরীরের রেবিস ভাইরাস থাকে কিন্তু সকল কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হয় না। জলাতঙ্ক প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কুকুরে কামড়ালে বা আঁচড় দিলে প্রথমে ক্ষতস্থানটিকে ভালো করে স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তারপরও যদি রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাহলে ব্যান্ডেজ করাতে হবে। তারপর নিকটস্থ সরকারি হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা নেই তাই আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ রোগীদের খুলনা মেডিকেল কলেজে রেফার করে দেই। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। "

শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি অভিযোগ জানিয়ে বলেন প্রশাস বেওয়ারিশ বাড়ির কুকুর নিধনে বা ভ্যাকসিনেশনে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা। কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয় পরিচালক ড. নাজমুস সাদাত বলেন " বিশ্ববিদ্যালয় কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। আমরা সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় কুকুর নিধনের উদ্যগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রাণী সংরক্ষণে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। তাই আমাদের বর্তমান পরিকল্পনায় সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় কুকুরদের ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার চেষ্টা করব। "